• 09 May, 2024

আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই

আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই

জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে, আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীকে আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিলে হয় উন্নয়ন, আর বিএনপি-জামায়াত করে দুর্নীতি, মানুষ খুন।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করে গতকাল শনিবার দুপুরে আনোয়ারায় কেইপিজেড মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজন করে।


এর আগে গতকাল সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলীর উত্তর তীরে নগরের পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নগরীর পতেঙ্গাকে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযোগকারী এই টানেলের ভেতর দিয়ে গাড়ি নিয়ে প্রথম যাত্রা করেন। টানেল অতিক্রম করে নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় তাঁর মোটরযানের টোল পরিশোধ করেন। পরে কেইপিজেড মাঠে জনসভায় যোগ দেন।


জনসভাস্থলে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নগর ও জেলার ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে, নানা রকম আন্দোলনের হুমকি দেয়। একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। ওই সব ভয়ভীতি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।



তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে ভোট চুরি করেছিল বলেই বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল। এটা তাদের মনে রাখা উচিত। এরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চুরি করে, বিএনপি-জামায়াত মানেই হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী।’

২২ মিনিটের বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী।


এই বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা হলো আজকের বাস্তবতা।’
নির্বাচিত হয়ে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনাকালে শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশব্যাপী উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা উন্নয়ন পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজ কর্ণফুলী টানেল পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরো উন্নয়ন পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। শুধু আপনাদের দোয়া চাই। আপনারা দোয়া করবেন। আপনারা আমাদের কাছে ওয়াদা করেন আগামী নির্বাচন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না, হাত তুলে ওয়াদা করেন।’ এ সময় হাত তুলে নৌকার প্রতি সমর্থন জানান উপস্থিত লাখো জনতা। তখন করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে জনসভাস্থল। সভাস্থল থেকে স্লোগান ওঠে, ‘বারবার দরকার, শেখ হাসিনার সরকার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, ওই লুটেরা, সন্ত্রাসীদের হাতে যেন দেশ না পড়ে। বিএনপির কাজ হচ্ছে মানুষ খুন করা, লুটপাট করা, দুর্নীতি করা। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ এতিমদের না দিয়ে এক ব্যাংকে রেখে দিয়ে সেই অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাঁর ছেলে তারেক রহমান বিদেশে পালিয়ে আছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর কোটি কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত, সে কারণে সে সাজাপ্রাপ্ত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক।’

বঙ্গবন্ধু টানেলকে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য ‘উপহার’ হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘আজ দইজ্জ্যার তল দিয়ে (নদীর নিচ দিয়ে) গাড়ি চলে। অর্থাৎ টানেল, কর্ণফুলী নদী। এখানে চট্টগ্রাম বন্দর। বারবার সিলটেশন (পলি জমা) হয়। যত ব্রিজ করব তত সিলটেশন হয়। তাই সিদ্ধান্ত হয় টানেল করে দেব। এই টানেল যোগাযোগব্যবস্থায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। এখন আর ঝড়-বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হবে না। নদীর তলদেশ দিয়ে এত বড় টানেল ধরে চলে যেতে পারবেন, এই প্রথম।’

আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই

জলাবদ্ধতাকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই সমস্যা দূরীকরণে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলছে।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ভূমিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং একটি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। বার্তায় শি চিনপিং বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার স্বাক্ষর বহনকারী একটি প্রকল্প এবং দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতার আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এই টানেল স্থানীয় যান চলাচল পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাবে এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সংযোগ সড়কসহ ৯.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক টানেল আজ সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।