• 03 Oct, 2025

৫ অক্টোবর ডা. বি. চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

৫ অক্টোবর ডা. বি. চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক (ডা.) এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ৫ অক্টোবর। যিনি ডা. বি. নামেই সবার কাছে পরিচিত ছিলেন।

২০২৪ সালের ০৫ অক্টোবর উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র প্রথম মহাসচিব।

১৯৭৮ সালে তৎকালীন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে বদরুদ্দোজা চৌধুরী জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রিসভায় উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া — দুই সরকারের সময়ই মন্ত্রী ছিলেন। বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেছিলেন। তিনি দুর্নীতিকে ঘৃণা করতেন। এই জন্য দুর্নীতি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে নি কখনও।বিটিভিতে তাঁর উপস্থাপনায় ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠানটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। তাঁর কথা ধরণ মানুষের মন ছুঁয়ে থাকত। তিনি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারতেন।

মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে বদরুদ্দোজা চৌধুরী পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দুবার জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং একবার বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।

২০০৪ সালের ৮ মে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম নেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তাঁর বাবা আইনজীবী কফিলউদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন কৃতী ছাত্র। ১৯৪৭ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সব পরীক্ষাতেই তিনি মেধা তালিকায় ছিলেন।

ডা. বি.চৌধুরী যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ লন্ডন, এডিনবরা ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো, এফ.আর.সি.পি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফ.সি.পি.এস ফেলো ছিলেন।

তাঁর স্ত্রী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। তিনি দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। তাঁর বড় মেয়ে ব্যারিস্টার মুনা চৌধুরী পেশায় আইনজীবী। ছোট মেয়ে অধ্যাপক (ডা.) শায়লা সাফিয়া চৌধুরী ইন্টার্নাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী আন্তর্জাতিক যক্ষ্মা ও বক্ষরোগ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেন (নয়াদিল্লি ১৯৭৪; সিউল ১৯৭৬; ইস্তাম্বুল ১৯৭৭; ব্রাসেলস ১৯৭৮; ব্রাইটন ১৯৭৮)। তিনি জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে (১৯৭৮ ও ১৯৭৯) বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন। ১৯৮১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বিকল্প প্রধান প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন।

একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার এবং খ্যাতনামা বক্তা হিসেবে তিনি ১৯৭৬ সালে জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।

বিকল্পধারা বাংলাদেশ তাঁর মৃত্যু বার্ষিকীতে বেশকিছু কর্মসূচি নিয়েছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়াহাটাতে খতমে কুরআন, কবর জিয়ারত, আলোচনা ও দুআ এবং দরিদ্র ও এতিম মাদ্রাসা ছাত্রদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা।