মধুমতী নদীর ওপর গোপালগঞ্জ ও নড়াইলকে সংযোগকারী দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। তবে সেতুটি চালু হওয়ার পর নড়াইল-যশোর সড়কে নড়াইল অংশে ধোপখোলা থেকে বাঁশভিটা পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার বাইপাস সড়ক না হওয়ায় জেলা শহরে যানজটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে কালনা ফেরি পার হয়ে বাহনগুলোকে নড়াইল শহরের ধোপাখোলা থেকে গোহাটা(সাড়ে তিন কিলোমিটার) দিয়ে যশোর পৌঁছাতে হয়।ফলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহন সংশ্নিষ্টদের আশঙ্কা কালনা সেতু চালু হওয়ার পর নড়াইল অংশে যানজটে ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ঘটনাও বাড়তে পারে।কারণ, নড়াইল শহরের ওপর দিয়ে যাওয়া ব্যস্ত এ সড়কটির পাশে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের(সওজ) ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাট এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশায় মধুমতী নদীর ওপর এ সেতু নির্মিত হচ্ছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও দেশীয় অর্থায়নে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের টেককেন করপোরেশন এবং বাংলাদেশের আবদুল মোমেনলিমিটেড যৌথভাবে এর কাজ করছে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘ছয় লেনের এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত বর্তমানে দুই লেনের সড়ক চালু থাকছে।এর মধ্যে নড়াইল শহরের মধ্য দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যশোরে পৌঁছাতে হয়।পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কালনা ফেরিঘাট দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।এ অংশে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মিত না হলে সড়কের সুফল এখনই পাবে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।আগামী সেপ্টেম্বরে কালনা সেতু চালু হলে আরও কয়েক গুণ চাপ বাড়বে। ফলে নিয়মিত সৃষ্টি হবে যানজট।
কালনা সেতু ছয় লেনবিশিষ্ট ৬৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৭.১০ মিটার প্রস্থের পাইল ফাউন্ডেশনের ওপর দেশের সবচেয়েবড় আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু, যা হবে দৃষ্টিনন্দন। পদ্মা সেতুর পাইল ক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত।কিন্তু এ সেতুর পাইল ক্যাপ পানির নিচে মাটির ভেতরে।তাই নৌযান চলাচলে সমস্যা হবে না, পলি জমবে না এবং নদীর স্রোত কম বাধাগ্রস্ত হবে।এ সেতুর দুই অংশে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।বর্ষায় পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং নদীর মাঝখানে সেতুতে যান চলাচলের জন্য ১৫০ মিটার ফাঁকা থাকছে। এ পর্যন্ত সেতুর ৯১ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর কালনা সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এ মধুমতী নদীর ওপর কালনা সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, শিল্প শহর নওয়াপাড়া, বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সঙ্গে গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-মাদারীপুর-বরিশাল-পিরোজপুর-পটুয়াখালী এবং পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।কৃষিপণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রেও সহজ হবে এবং নড়াইলে পর্যটন শিল্প এবং কলকারখানা গড়ে উঠবে।সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের। ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ।চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে।নড়াইল শহর থেকে ঢাকার দূরত্ব হবে মাত্র ১২৭ কিলোমিটার। এ ক্ষেত্রে নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৮১ কিলোমিটার।অর্থাৎ নড়াইল, বেনাপোল, যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগ ১০০ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার কমবে।
নড়াইল বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহিরুল হক বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর নড়াইলের ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলছে। কালনা সেতু চালু হলে শহরের ধোপাখোলা-বাঁশভিটা সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশে নিরাপদ সড়ক না থাকায় তাদের ভোগান্তি বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, আপাতত চাপ সামলাতে কালনা থেকে নড়াইল শহরের ধোপাখোলা থেকে গোহাট খোলা সাড়ে তিন কিলোমিটার হয়ে যশোর পর্যন্ত বর্তমান সড়কটি আরও ছয় ফুট পিচ ঢালাই করে চওড়া করা হবে। এ কাজের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে।এখন আর্থিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে তিনি ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত ‘ছয় লেন এক্সপ্রেসওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি পরিকল্পনাধীন বলে জানিয়েছেন।