• 12 Sep, 2024

নড়াইলে সন্ত্রাসী উজ্জ্বলের সন্ত্রাসের অডিও ফাঁস, আন্ডারওয়ার্ল্ডের শিমুল ভূঁইয়ার সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগের কথা বলেছেন অবলীলায়

নড়াইলে সন্ত্রাসী উজ্জ্বলের সন্ত্রাসের অডিও ফাঁস, আন্ডারওয়ার্ল্ডের শিমুল ভূঁইয়ার সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগের কথা বলেছেন অবলীলায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গতকাল পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পরপরই বেরিয়ে এলো নড়াইলে সন্ত্রাসী উজ্জ্বলের সন্ত্রাসের অডিও। অডিওতে শোনা যায়, তিনি কারোর হাত-পা কাটার হুমকি দিচ্ছেন। আবার এমপি আনার হত্যার আসামি আন্ডারওয়ার্ল্ডের শার্ষ সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগের কথা বলছেন অবলীলায়। নিউটন গাজীকে হুমকি দিতে তারই সুমন্দী (স্ত্রীর বড়ভাই) ইতালী প্রবাসী লিটন ভূঁইয়ার কাছে একটি ভয়েস ক্লিপ পাঠায় উজ্জ্বল শেখ।

সদর উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গোবরা এলাকার নিউটন গাজীর বাড়ি ও উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন তার গাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে নড়াইল সদর থানা পুলিশ নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলা এলাকা থেকে উজ্জ্বল শেখকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় উজ্জ্বল শেখকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন নিউটন গাজী। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকার হিন্দুদের জমিদখলসহ একাধিক মামলা রয়েছে সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

অডিও ক্লিপে উজ্জ্বল ওপাশে কোন এক বড়ভাইকে বলছেন “তারে একটা ফু দিলে তার পশম কেউ খুজে পাবে না, ওরে তো এমনি মারবো না অন্ধকারে ওর দুটো পা কিন্তু ভাই কেটে দেবো” এরপরই তিনি বলেন “ওরে মাফ করছি আরো একটি কারণ আছে ভাই, এই যে আমাদের যে এমপি মার্ডার হইছে না ইন্ডিয়াতে ওখানে যে মেইন লোক শিমুল ভাই তার বৌ-মেয়ে এবং ওনার আরো একজন লোক ১৯ তারিখ থেকে আমার বাসায়, আজকে আমি তাদের নিয়ে ঢাকায় আসছি। আমি যদি কোন ঝামেলা করি তাহলে তো পুলিশ আমার বাসায় যাবে, লোকগুলো আমার বাসায় আমার আশ্রয়ে আছে, বোঝেন তো দলদারি করি তাদের সাথে চলি”।

নড়াইল সদর উপজেলার শিংগাসোলপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এলাকাবাসীর জানা থাকলেও তা প্রমানে সাহস করেনি কেউ। সম্প্রতি  সংখ্যালঘু পরিবারের জমিদখলসহ নানা সন্ত্রাসী কাজের বিষয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত ২১মে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার সন্ত্রাসী কর্মকা- আরো তীব্র হয়ে ওঠে। নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি, এমনকি প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীকের এজেন্ট সৈয়দ ওয়াজেদ আলীর পরিবারকে জোর করে নিজের সমর্থিত ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গোবরা বাজারের পাশে নড়াইল-ফুলতলা সড়কের পাশে উজ্জ¦ল শেখের বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাস। তার পিতার নাম সাত্তার শেখ। উজ্জ্বল বিগত ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান হন। মূলত এ সময় থেকেই সন্ত্রাসী উজ্জ¦ল শেখ তার কর্মকান্ড বিস্তার করে। গোবরা বাজারের পাশে তার বাড়িতে পাশর্^বর্তী যশোরের অভয়নগর থানার বিভিন্ন সন্ত্রাসী লোকেদের আনাগোনা।

গোবরা বাজারের একটি বড় অংশই তার দখলে রয়েছে। গোবরা বাজারের অশোক মেম্বারের দোকান দখলে নিয়েছে উজ্জ্বল। মহিতোষ দে নামের একজনের দোকানের ভাড়া জোর করে আদায় করে নেয় এই সন্ত্রাসী উজ্জ্বল। গোবরা-নলদীরচর এলাকার হিন্দুদের জমিজমা সুযোগ পেলেই ভয় দেখিয়ে দখলে নিয়েছে। এ বিষয়ে হিন্দুরা ভয়ে মুখ খোলেন না।

২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে হেরে যাবার পরে গোবরা বাজারের ধান ব্যবসায়ী আনোয়ার মোল্যাকে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয় উজ্জ্বলের লোকেরা। চরম মানবেতরভাবে ভাঙ্গা পা নিয়ে ক্রাচে ভর করে  চলাচল করেন আনোয়ার। এছাড়া গোবরা প্রগতি বিদ্যালয়ের কর্মচারী মুরগী ব্যবসায়ী মিশকাতকে নির্বাচনে তার বিরোধিতা করার অপরাধে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয়।

গোবরা বাসস্ট্যান্ড মোড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের তারাপদ শীল, দুলাল শীল ও তরুণ শীলের প্রায় ২০ শতক জমির উপর নির্মিত ৫টি দোকান ঘরের সবকটিই দখলে নেয় উজ্জল শেখ। তারা নিজের জমিতে  আরো ৭টি দোকান তুলতে গেলে তাতে বাধা দিয়ে নিজের জমি দাবি করে উজ্জ¦ল। দোকানের ভাড়াও আদায় করে নেয় উজ্জলের লোকেরা। এই দেকানের মধ্যে একটিতে নিজের অফিস বানিয়েছে উজ্জ্বল।

ভুক্তভোগী রূপগঞ্জ বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী তরুণ শীল বলেন, উজ্জ্বল কয়েক দফা আমাদের হুমকি দিয়ে দোকান ঘর নিয়ে নেছে। পুরো জমি লিখে দিতে হবে না হলে ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে, না হলে আমাদের ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। এখন আবার আমার চাচাতো ভাই শেখর শীলের নতুন ভবনও সে দখলে নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানায়, উজ্জলের সাথে ফুলতলার গিয়াস বাহিনীর প্রধান গিয়াস এবং একই এলাকার অন্য বাহিনী শিমুল ভুঁইয়ার সাথে যোগাযোগ রয়েছে। এই দুই বাহিনীর প্রধানরা নিয়মিত উজ্জ¦লের বাড়িতে বেড়াতে এবং নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজে আসতো।

শিংগাশোলপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হিটু জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান হবার পর থেকেই তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রকাশ্যে আসে। সে এলাকার অন্তত শত মানুষের বাড়িঘর-দোকান দখল করে নিয়েছে। পাঁচ বছরে সে অন্তত আড়াইশো বার ইন্ডিয়া গেছে যা আপনারা তার পাসপোর্ট দেখলেই পাবেন।

নড়াইল সদর থানার ওসি মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, দুটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাংবাদিকের মাধ্যমে শুনছি তার নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা। সেগুলো কোন প্রমাণ বা আরো মামলা হলে তা পুলিশ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।