‘নড়াইল জেলাধীন নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের বাস্তব অবস্থা ও নদ-নদী রক্ষায় করণীয়’ বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (০৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিব (যুগ্ম সচিব) মো: রফিকুল ইসলাম।
মতবিনিময়ে নড়াইল জেলাধীন নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী।
প্রধান অতিথি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিব (যুগ্ম সচিব) মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এর টিমের পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন দপ্তরের প্রাপ্ত তথ্যানুসরে এ জেলায় ৭টি নদী রয়েছে। নদ-নদী রক্ষায় সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার রায়, জেলা কমান্ড্যান্ট আনসার ও ভিডিপি বিকাশ চন্দ্র দাশ, এলজিউডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুন্ডু, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল সেন, বেসরকারী উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠন স্বাবলম্বী’র নির্বাহী পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমান, সমাজকর্মী শেখ হানিফ, দৈনিক ওশানের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গুলশান আরা প্রমুখ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জুবায়ের হোসেন চৌধূরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক মো: মনজুর হোসেন, সদরের ইউএনও, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সহকারী প্রধান মো: আশরাফুল হক, সহকারী প্রধান সাকিব মাহমুদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল, কাজী আনিচুজ্জামান, এনজিও প্রতিনিধি স্বপ্না রায়, জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্যবৃন্দ।
অধিকতর জনসচেতনতার লক্ষ্যে নদী সুরক্ষায় আরও কিছু তথ্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
নদীর বিশেষ মর্যাদা ও পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবহমান সকল নদী আইনি ব্যক্তি ও জীবন্ত সত্তা হিসাবে বিবেচিত হবে। সকল নদীই একই মর্যাদা প্রাপ্ত হবে। সেই সঙ্গে সকল নদী পাবলিক ট্রাস্ট ডকট্রিনের আওতায় হওয়ায় সেগুলো জন সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে। নদী সংশ্লিষ্ট কোন পরিকল্পনা করতে হলে পরিকল্পনা কমিশন, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, বিএডিসিসহ সকল সংস্থাকে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে এবং অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। ২০২০ সালে সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, অন্য আইনে যা কিছুই বলা হোক না কেন, নদীর দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, মৎস্য চাষ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকান্ড ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। সরকারি কোন কর্মকর্তাও যদি নদ-নদীর জায়গা, তীরভূমি ইত্যাদি অবৈধভাবে কারো নামে বরাদ্দ করেন, তারাও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে দোষী হবেন।
বিভাগীয় শহরে নদী রক্ষা আদালত
প্রতিটি বিভাগে 'নদী রক্ষা কোর্ট' নামে এক বা একাধিক কোর্ট স্থাপিত থাকবে। নদী ও জলাধার সংক্রান্ত সকল বিষয় নিয়ে এই আদালত বিচার করবেন। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। নদী দখল, দূষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দিতে পারবে মোবাইল কোর্ট। কমিশন ছাড়াও নদী রক্ষার্থে যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা নাগরিক কোর্টে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পুনরুদ্ধার ও দূষণ রোধের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারবেন। পরোয়ানা ব্যতীত গ্রেপ্তারের ক্ষমতা একমাস বা ততোধিক শাস্তিযোগ্য কোন নদী সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, এমন সন্দেহে কমিশনের কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি বা নৌ পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই উক্ত বা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
শাস্তি
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ এক বৎসর কারাদন্ড বা অনুর্ধ ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। এছাড়া ফৌজদারি বিভিন্ন আইনের ধারা অনুযায়ীও শাস্তির বিধান রয়েছে এই আইনে। নদীর জমির অবৈধ দখল সংক্রান্ত অপরাধে শাস্তি হবে এক বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড। নদীর প্লাবন ভূমি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে লিজ বা সাব-লিজ দেয়া হলে, নদ-নদীর জরিপ, পর্চা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া হলে, ডুবো চরকে চরে রূপান্তরের চেষ্টা, পানি প্রবাহে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্ষতিসাধন ইত্যাদি করার চেষ্টা করা হলে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। নদ-নদীর জমিতে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা বা অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে দখল বা নদীর ক্ষতি করে ব্রিজ, কালভার্ট তৈরি করা হলেও একই শাস্তি হবে।
পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা
অন্য আইনে যা কিছুই বলা হোক না কেন, নদ-নদীর অবৈধ দখল, দূষণ, নাব্যতা হ্রাস, পানি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জৈববৈচিত্র বিঘিœত বা সংকটাপন্ন বলে মনে হলে ওই এলাকাতে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বলে ঘোষণা করতে পারবে কমিশন।