• 29 Mar, 2024

নড়াইলে মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্তরা

নড়াইলে মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্তরা

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদীর ভাঙ্গনের কবলে ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো।

মধুমতি নদীর ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে শালনগরজয়পুরইতনাকোটাকোল ইউনিয়নের মানচিত্র।মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে এই সকল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদী গর্ভে বিলিন হতে চলেছে।এ বছরও নদী ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে।

ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর নদীতে বিলিন হয়েগেছে। ভাঙ্গরোধে ব্যাবস্থা নেয়ার দাবি ক্ষতিগ্রস্থদের।

জানা গেছেনদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামের লোকজন নদীর ওপারে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ  বুড়াইচ ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছে।মধুমতি নদীর তীরবর্তী শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুরশিয়েরবর গ্রামচর আজমপুরমন্ডলবাগচর গোপালপুর খেয়াঘাটচাকশীনওখোলা মিয়াপাড়াচরশালনগরকাশিপুরমাকড়াইল  চর মাকড়াইলরামচন্দ্রপুরমল্ডলবাঘ এলাকায় বসতবাড়িফসলি জমি  পাকা রাস্তা মধুমতি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে।

ভাঙ্গন কবলিত গ্রামের বসবাসকারী লোকজন নদী ভাঙ্গনের ভয়ে তাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।বিভিন্ন ধরনের গাছপালা কেটে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে।মাকড়াইল গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশ ইতিমধ্যে নদীতে ভেঙ্গে গেছে এবং ওই গ্রামে অবস্থিত বাংলালিংকের মোবাইল টাওয়ার অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শিয়েরবরের হাট রক্ষার জন্য নদীতে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও সম্প্রতি নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করায় ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী হাটটি।

একই রকম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেমন্ডলবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মল্ডলবাগ আল-নুর জামে মসজিদনওখোলার আল-হেরা দাখিল মাদ্রাসাচাকশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়  রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি মসজিদসহ শতাধিক বাড়িঘর ওফসলি জমি।

নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মন্ডলবাগ গ্রামের পাকা রাস্তাসেতুবসতবাড়ি গাছগাছপালা  ফসলী জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।নদী ভাঙ্গনের কারণে নওখোলাচরশালনগরচরকাশিপুর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে নদীর ওপার বসবাস করছে।

এই মুহুর্তে শিয়েরবরের হাট  নদী ভাঙ্গন কবলিত প্রামগুলো রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এলাকার মানুষ নিঃশ্ব হয়ে যাবে।কয়েক বছর যাবৎ মধুমতি নদী ভাঙ্গনের ফলে ইউনিয়নের কাতলাশুরচরগোপালপুরচাকশীচরখড়কদিয়াচরশালনগরচরমাকড়াইল গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের জমিজমা নদীর ওপার চলে যাওয়ায় তারা সেখানে ঘরবাড়ি বানিয়েবসবাস করছে। অন্য ইউনিয়নে বসবাস করায় তারা সেখানকার ভোটার হয়ে গেছে।এভাবে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙ্গনের ফলে ইউনিয়নের পুরানো মানচিত্র পাল্টে গেছে।

শালনগর ইউনিয়নর মন্ডলবাঘ গ্রামের আজগর আলী বলেনআমার বাড়ি আগে ছিলো অন্য যায়গায় সেটি ভেঙ্গে নদীর মধ্যে চলে গেছে। পরে এখানে বাড়ি করি সেটিও এবার ভাঙ্গনের মুখে চলে আসায় যতটুকু সম্ভব সরিয়ে নিয়েছি।নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আমরা নিঃশ্ব হয়ে গেলাম।

একই এলাকার মামুন বলেনআমরা গরীব মানুষ প্রতি বছর এভাবে আমাদেও বাড়ি-ঘর নদীতে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমরা সরকারের কাছে চাল-ডাল চাই নানদী ভাঙ্গন থেকে মুক্তি চাই।

কাজের প্রয়োজনে শহরে বসবাস করেন বাবু মিয়া গ্রামে থাকেন মা তিনি বলেনগত শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন আসে বাড়ি-ঘর না সরালে যে কোন সময় নদীগর্ভে চলে যাবে।ওই রাতে বাড়িতে যায় যতটুকু সম্ভব পেরেছি ভেঙ্গে সরিয়ে নিয়েছি।

তিনি আরও বলেনআমি অনেকবার চেষ্টা করেছি মাকে নিয়ে আসতে তিনি বাব-দাদার কবর রেখে শহরে আসতে চান না। এবার সে কবরগুলোও নদীতে চলে গেলো।

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন জানানজনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে থাকলে সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।বরাদ্দ পেলে নদী রোভাঙ্গন ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহল করা হবে।