নড়াইলকণ্ঠ ॥‘জনতার মুখোমুখি, জনতার সেবক’ শিরোনামে এমন ব্যতিক্রমি থীম নিয়ে ২য় দিনের মতো লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের জনতার কাঠগড়ায় জবাবদিহিতা করতে দাঁড়িয়েছেন ‘জনতার সেবক’ নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ বিরল বলে মনে করেন এলাকার সচেতন নাগরিকগণ।
বৃহস্পতিবার(২২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে কোটাকোল লঞ্চঘাট লঞ্চঘাট মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনতার কাঠগড়ায় বসে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ থেকে বিগত ৪ বছরের পাওয়া না পাওয়ার নানা অভিযোগ, আবেদন ওপরামর্শ শোনেন এবং নিজে নোট করেন।
অভিযোগের মধ্যে ছিলো নদীভাঙ্গনরোধ, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসকের অভাব, উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুর্নীতি, বিদ্যালয় ভবন ও সেতু-কালভার্ট নির্মাণ এবং মসজিদ-মন্দির সংস্কারের দাবি তুলে ধরেন।এমপির প্রকল্প তালিকায় নাম আছে অথচ বাস্তবে কাজ হয়নি এমন অভিযোগ করা হয় এ অনুষ্ঠানে।পরে এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এসব প্রশ্নের পর্যায়ক্রমে উত্তর দেন।
এসময় রাস্তাঘাট নির্মাণ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘আপনারা জানেন করোনার কারণে প্রায় দুই বছর উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ ছিল। তবুও বাকি সময় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মন্দিরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
এমপির সঙ্গে দেখা করতে না পারার অভিযোগের উত্তরে মাশরাফি বলেন, ‘আপনাদের জন্য আমার দরজা ২৪ ঘণ্টাই খোলা। যে কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। আপনাদের কথা শুনতে আমি বাধ্য।এর আগে অনেকেই আপনাদের মাথায় হাত বুলিয়ে খুশি করে থাকতে পারে। কিন্তু আমি তা করতে চাই না।আমি এসেছি আপনাদের কথা শুনতে। আপনারা আমাকে ভোট দিয়েছেন।’
চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন চাইলেই রাতারাতি এখানে হাসপাতাল বানানো সম্ভব নয়। সরকারি কাজের কিছু নিয়মকানুন আছে। এসব নিয়ম মেনে এ ব্যাপারে যা যা করা সম্ভব সবই করব।আপনারা আমার ওপর ভরসা রাখেন।’
ভূমি অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সেবা নিতে এসে ভবিষ্যতে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে।’
মাশরাফী বলেন, অনেকেই না জেনে প্রশ্ন করেছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও বরাদ্দের লিষ্ট নিয়ে মিলিয়ে দেখুন।বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি- এ রকম হয়ে থাকলে আমাকে জানান। এর মধ্যে অনেক রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন বাকী আছে, সেগুলোও আস্তে আস্তে করা হবে।
তিনি আরও জানান, ধারাবাহিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে নড়াইল-লোহাগড়ায় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে।এই এলাকার রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা ভবন, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ এবং মসজিদ-মন্দির সংস্কারের বিষয়ে আমি কাজ করছি। আশা করছি, খুব দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।নদী ভাঙ্গনের বিষয়েও আমাদের কাজ চলমান। ইনশাআল্লাহ নদী শাসনের বাকি কাজ গুলো দ্রুত সমাধান হবে।
কোটাকোল ইউনিয়নবাসীর আয়োজনে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিনের সভাপতিত্ব করেন।
এ সময় নড়াইল পৌরসভার কাউন্সিলর শরফুল আলম লিটুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লোহাগড়া উপজেলাপরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান রুনু শিকদার, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর আলী, উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক ও মেয়র সৈয়দ মশিয়ুর রহমান, কোটাকোল ইউপি চেয়ারম্যান হাচান আল মামুদ, সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খাঁন প্রমুখ।
এর আগে এদিন(২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার মহিষখোলায় শরীফ আব্দুল হাকিম ও নড়াইল এক্সপ্রেস হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের উদ্বোধন করেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন ও জেএমআই রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে এই সেন্টারটি স্থাপন করা হয়।চার শয্যাবিশিষ্ট এই সেন্টারে বছরে প্রায় চার হাজার রোগীকে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এর মধ্যদিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মাশরাফী বিন মর্তুজার উদ্যোগে প্রথমবারের মতো কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার পেল নড়াইলবাসী।
এসময় জেএমআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক, জেলা প্রশাসক মোহম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সদর পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।