• 08 Feb, 2025

এলজিইডি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর ও তার স্ত্রীর নামে নড়াইলে দুদক’এর মামলা

এলজিইডি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর ও তার স্ত্রীর নামে নড়াইলে দুদক’এর মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ও জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখার দায়ে এলজিইডি’র সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী কাজী বনানী রহমান (৫০) এর নামে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। অভিযুক্তদের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুরে।

মঙ্গলবার (০৪ জুন) বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত নড়াইলের অধিক্ষেত্রাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর (নড়াইল) এর তদন্তের মাধ্যমে এ মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অনুঃ ও তদন্ত-১), মোঃ আলিয়াজ হোসেন। মামলা নং-০৪, তারিখ-০৪/০৬/২০২৪।  

আসামি (১) কাজী বনানী রহমান ও তার স্বামী (২) কাজী মিজানুর রহমান, উভয়ের স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম-শোলপুর, ডাকঘর-সিংগাশোলপুর, উপজেলা-নড়াইল সদর, জেলা-নড়াইল দ্বয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা একে অপরের সহায়তায় আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ও জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত ১৭,৩৩,৬৬,৬১৮/- (সতেরো  কোটি তেত্রিশ লক্ষ ছেষট্টি হাজার ছয়শত আঠারো) টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখার অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অধিকতর তদন্তের জন্য এ মামলা করা হয়।

আসামি কাজী মিজানুর রহমান বিগত ০৪/১১/১৯৮৯ খ্রিঃ তারিখে উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে তিনি "তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী" ও প্রকল্প পরিচালক গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, আগারগাঁও, ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন এবং সর্বশেষ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) খুলনা হতে পিআরএল গমন করেন। চাকরিকালীন অবৈধ ও অসদুপায়ে উপার্জিত আয় দ্বারা তার স্ত্রী কাজী বনানী রহমানের নামে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের বিষয়টি দুদকের প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়।

দুদকের যাচাই/অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রে (গত ০২/০২/২০২২ খ্রিঃ তারিখে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে) যা উঠে এসেছে তা হলো:- আসামি (১) কাজী বনানী রহমান গত ০৬/০৩/১৯৯৭ হতে ০২/০২/২০২২ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত নিজ নামে মোট ৪০,৪৪,১০,৪১৫/- টাকার স্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন।

 এক্ষেত্রে তিনি মোট ৫৯টি দলিলমূলে জমি ও স্থাপনা ক্রয় এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণসহ ০২/০২/২০২২খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট (৫,৭৩,৩০,৫০০ + ৪,৭০,৭৯,৯১৫) = ১০,৪৪,১০,৪১৫/- টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ অর্জনের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।

অর্থাৎ আসামি কাজী বনানী রহমান গত ০২/০২/২০২২ খ্রিঃ তারিখে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী তার ১০,৪৪,১০,৪১৫/- টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ৯,৩৬,৯৪,৭৬৭/- টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট (১০,৪৪,১০,৪১৫ + ১,৩৬,৯৬,৭৯৭) = ১৯,৮১,০৫ ১৮২/- টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখেছেন। সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় তিনি কোন ঋণ/দায়-দেনা প্রদর্শন করেননি। ঋণ/দায়-দেনা না থাকায় তার নামে নীট ১৯,৮১,০৫,১৮২/- টাকা মূলোর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।

তবে তিনি তার আয়ের গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। তার মোট অগ্রহণযোগ্য আয় ৯,৩৫,৭১,৭৫৬/- টাকা। অগ্রহণযোগ্য আয় বাদে তার মোট (১১,৮৩,১০,৩২০-৯,৩৫,৭১,৭৫৬) = ২,৪৭,৩৮,৫৬৪/- টাকার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে তার অর্জিত নীট সম্পদের মূল্য ১৯,৮১,০৫,১৮২/- টাকা। আসামি কর্তৃক অবশিষ্ট ১৯,৮১,০৫,১৮২ টাকা। আসামী কর্তৃক অবশিষ্ট (১৯, ৮১,০৫, ১৮২-২,৪৭,৩৮,৫৬৪)=১৭,০৩,৬৬,৬১৮/- টাকা মূল্যের সম্পদের বিপরীতে বৈধ আয়ের উৎস সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র যাচাই/অনুসন্ধানকালে সরবরাহ করতে পারেননি। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র মোতাবেক আসামি কাজী বনানী রহমান একজন গৃহিনী ও স্বামীর উপর নির্ভশীল। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এদিকে এলজিইডি’র সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ও জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত ১৭,৩৩,৬৬,৬১৮/- (সতেরো কোটি তেত্রিশ লক্ষ জিষটি হাজার ছয়শত আঠারো) টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদকের এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি (১) কাজী বনানী রহমান (বয়স-৫০ বছর), স্বামী: কাজী মিজানুর রহমান ও (২) কাজী মিজানুর রহমান (বয়স-৬০ বছর), অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমানে পিআরএল ভোগরত), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), খুলনা বিভাগ, খুলনা, পিতা: মৃত কাজী কেনায়েত হোসেন, উভয়ের স্থায়ী ঠিকানা-গ্রাম। শালপুর, ডাকঘর: সিংগা শোলপুর, উপজেলা: নড়াইল সদর, জেলা: নড়াইল পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ও জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত ১৭,৩৩,৬৬,৬১৮/- (সতেরো কোটি তেত্রিশ লক্ষ ষেষট্টি হাজার ছয়শত আঠারো) টাকার সম্পদ অর্জন ও  ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) প্রারা ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।