নড়াইলকণ্ঠ:নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস ও পক্ষ উপলক্ষে আজ (৩০ নভেম্বর) বুধবার খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে “অপরাজিতা’র অপ্রতিরোধ্য অগ্রাযাত্রা” অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর-এর উপপরিচালক হাসনা হেনা ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রূপান্তর নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ। দিবসের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাগেরহাট জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি রিজিয়া পারভিন।
ওপ
সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জনাব মোঃ ইউসুপ আলী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন কেএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন খুলনা জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ফারজানা ফেরদৌস নিশা। সভায় খুলনা ও বাগেরহাট জেলার উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান,নারী জনপ্রতিনিধিরা,অপরাজিতা ও পিস ক্লাব সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
“সবার মাঝে ঐক্য গড়ি, নারী ও শিশু নির্যতন বন্ধ করি’’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস ও পক্ষকাল ২০২২ পালন করা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ও হেলভেটার সুইস ইন্টারকোঅপারেশন বাংলাদেশের সমন্বয়ে এবং রূপান্তর-এর আয়োজনে আজকের এই কর্মসূচী পালিত হয়।
অপরাজিতা’র অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অনুষ্ঠানে নারীদের জন্য গতাগতিক প্রতিযোগেতার বাইরের খেলাগুলি অন্তর্ভূক্ত করা হয়। খেলাগুলির মধ্যে ছিলো ফুটবল, দড়িটানাটানি, মোরগ লড়াই, দৌড় ও রিলে দৌড় প্রতিযোগিতা। ফুটবল খেলায় বাগেরহাট জেলা চাম্পিয়ন, দড়িটানাটানিতে বাগেরহাট জেলা চাম্পিয়ন হয়।
বক্তারা বলেন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বিশেষ করে যৌন নিপীড়ন প্রায় প্রতিটি নারীর প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা। লিঙ্গান্তরিত, হিজড়া ও অন্যান্য প্রান্তিক অবস্থানে থাকা নারীর ক্ষেত্রেও এই অভিজ্ঞতা ভিন্ন নয়। ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, চলতে-ফিরতে শরীরের উপর অযাচিত স্পর্শ, চাহনি, অঙ্গভঙ্গি ও বাজে মন্তব্যসহ নানাভাবে যৌন হেনস্তার শিকার হয় নারী, যা তাকে সর্বদা ভীতসন্ত্রস্থ ও সঙ্কুচিত করে রাখে। ফলে তার স্বাভাবিক বিকাশ হয় বাধাগ্রস্থ, কখনো কখনো জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। ঘরও নিরাপদ নয় অনেক নারীর জন্যেই। পারিবারিক সহিংসতার শিকার অনেক নারী। কর্মক্ষেত্রেও অনেক সময়েই নানা নির্যাতন ও পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ মোকাবেলা করে নারীকে এগুতে হয়।
নারীর উপর যৌন নিপীড়ন কেবলমাত্র কোন ব্যক্তির একক বা বিচ্ছিন্ন কোন আচরণ নয়। এর মূলে রয়েছে নারীকে অধস্তন ও পুরুষের ভোগ্যবস্তু বিবেচনা করা এবং সর্বোপরি তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য না করা। এই চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়ম ও আইন-কানুন এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারীর উপর যৌন নিপীড়নকে উৎসাহিত করে। এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ হওয়া জরুরী, তাই এ আচরণ যে বা যারাই করুক, যেখান থেকেই আসুক, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বহাল রাখতে হবে, ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী বিরুদ্ধ সংস্কৃতি ও অসহিষ্ণু এবং বৈষম্যমূলক সমাজচিন্তা পরিবর্তনের জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একক ও সম্মিলিতভাবে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কাজ করে যেতে হবে।
‘অপরাজিতা’র অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ কার্যক্রমের মূল্য বিষয়বস্তু ছিলো রাজনীতি ও স্থানীয় সরকার কাঠামোতে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই নারী নির্যাতন কমিয়ে আনা সম্ভব। সাথে সাথে সবাই অঙ্গীকার করেন নারী প্রতি সহিংসতা বন্ধে একজোট হয়ে কাজ করবো ও পাশে থাকবে।