স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে হয় কাজী সুমাইয়ার (২০)। হাতের মেহেদী রং শুকাতে না শুকাতে বিয়ের দুই মাস পর থেকে মধ্যযুগিয় কায়দায় স্বামী-শশুর বাড়ির লোকজন দ্বারা শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চলে সুমাইয়ার ওপর। কিল-ঘুষি, লাথি-চড়-থাপ্পর, কখনও শক্ত লাঠি দিয়ে পেটান হয় স্ত্রীকে। এসব ঘটনার কারনে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মীমাংশার জন্য কয়েকবার বসাবসিও করেছেন পরিবারের লোকজন। তাতেও কোন ফল হয়নি।
কাজী সুমাইয়া লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের শামুকখোলা গ্রামরে কাজী নজুরুল ইসলামের কন্যা। অভিযোগ উঠেছে, বিয়ের দুই মাস পর থেকেই মধ্যযুগিয় কায়দায় সুমাইয়ার ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পলইডাঙ্গা গ্রামের মনসুর খাঁনের ছেলে আশিকুর রহমান ও তার পরিবারের লোকজন।
গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে এঘটনাটি ঘটে স্বামীর বাড়ি পলইডাঙ্গা গ্রামে। মারপিট করে ওই গৃহবধূর মুখ থেঁতলে দেয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি তাকে করা হয়। নেশাগ্রস্থ স্বামীর পকেটে রাখা গাঁজার প্যাকেট ধরে ফেলায় তার ওপর এ নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ স্ত্রীর। ঘটনার পর থেকে তার স্বামী আশিকুর রহমান পলাতক রয়েছেন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
হাসপতাল সূত্র থেকে জানাযায়, মারপিটে তার মুখের কমপক্ষে ১০টি দাঁত নড়ে গেছে, ঠোঁটে অন্ততঃ ১০টি সেলাই, মাথা ও পায়ে রডের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থেঁতলানো মূখসহ মারাত্মক জখম অবস্থা নিয়ে সে এখন নড়াইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে স্ত্রী ও স্থানীয়দের সূত্রে আশিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত গাঁজা-ইয়াবা সেবন ও ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। নেশাগ্রস্থ স্বামীর বিরুদ্ধে পরকিয়ায় প্রেমেরও অভিযোগ রয়েছে।
জানাগেছে কাজী সুমাইয়ার স্বামী আশিকুর রহমান (২৮) রেলওয়ে প্রজেক্টে চাইনা কোম্পনীতে দো-ভাষি হিসেবে কাজ করেন। সূত্র মতে জানাগেছে এ কাজ করার সুবাদে ইতিমধ্যে কয়েকটি ট্রাক্টরের মালিক বনিয়ে গেছেন তিনি। তিনি এখন ধরারেসরা জ্ঞান করেন না। অন্য নারীর গন্ধে মরিয়া হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। এখন আর সুমাইকে ভাল্লাগে না তার এমন অভিযোগ স্ত্রী সুমাইয়ার!!
আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে নড়াইলকণ্ঠ প্রতিনিধি তার মুঠোফোনে (০১৯৪৮৯১৪৮০৬, ০১৭৮৪৪১৮১৪৫) ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সুমাইয়ার পিতা কাজী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নড়াইল সদর থানায় নারী ও শিশু দমন আইনে ৪জনকে আসামী করে মামলা করা করেছেন। বিষয়টি সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মানবাধিকার ও আইন বিশেষজ্ঞদের মতে এটা কি বাল্যবিবাহের পরিনিতি? এখন অল্পবয়সের এই হতভাগা সুমাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান ও ফুলসজ্জার স্মৃতি চিরতরে মিলান হতে চলেছে। দূর্ভাগ্য নারী জাতির, দূর্ভাগ্য আমাদের সমাজব্যবস্থার। অল্পবয়সে নেশাগ্রস্থ স্বামীর ইচ্ছায় দুই দুইবার করে সন্তান নষ্ট করেতে হয়েছে সুমাইয়ার।
সুমাইয়ার পিতা একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য এবং তার ভাইও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত। এমন একটি পরিবারের সন্তান সুমাইয়া। স্বামী-শশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের বলি হয়ে সে এখন নড়াইল সদর হাসপাতালে বাঁচার জন্য কাতরাচ্ছেন। এটাই কি অল্প বয়সে বিবাহের পরিনিতি? আর সত্যটাই বা কি?
বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন: