মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে কি না, সময় গড়ালেই তা স্পষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে সব দলই নির্বাচনে আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, যদি কেউ অংশ না নেয়, সেটা যার যার দলের ব্যাপার।
ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অনেক বিষয়ের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গও আসে। দেশ টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক সেখানে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট জাতীয় পার্টির নেতারা ‘বেসুরে বাজছেন’। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ মহাজোটগত থেকে নির্বাচন? নাকি এককভাবে বা ১৪ দলীয় জোট থেকে করবে?
উত্তরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “এখনও নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। সময় যত যাবে, ততই তো জিনিসটা স্পষ্ট হবে। আর আমাদের সাথে কে থাকবে, আর না থাকবে, বা নতুন জোট হবে, বা কী হবে… অসুবিধা নেই তো।
“সবাই ইলেকশনে পার্টিসিপেট করুক, সেটাই আমরা চাই। আর যদি কেউ না করে, এটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত।”
শেখ হাসিনা বলেন, “সংবিধানের ধারা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক। দীর্ঘ একটানা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে তো গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে।”
তবে অতীতে যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনী জোটে ছিল, তারা আগামীতেও থাকবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। আর তাতে তার আপত্তিও নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এত কাজ করার পরে জনগণের যে ভোট, অবশ্যই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে, তা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যদি এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান। না চাইলে তো কিছু করার নাই। সেটা জনগণের ইচ্ছা।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা অবৈধভাবে সরকারে এসেছিল, তাদের শাসনামলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কথাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশনের আলোচনায় ‘যে যার মত করে কথা বলার’ সুযোগ পাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারে আসার আগে কে এত কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, বলেন তো? কেউ পেয়েছে কখনো সুযোগ? পায়নি।
“কথা বলার তো অধিকার ছিল না। তবে হ্যাঁ, এখন শুনি সব কথা বলার পরে বলে কথা বলার অধিকার নাই। এটাও শুনতে হয়।”
বিগত সরকারগুলোর সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ‘অত্যাচার-নির্যাতনের’ কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে কি সেই পরিবেশ আছে? তা তো নাই।
“এমনকি আমার পার্টির কেউ যদি কোন অন্যায় করে আমরা কিন্তু ছেড়ে দিই না। যে আমার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, কিছু বলব না, তা না। যে অন্যায় করবে, তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব এবং নিচ্ছি। সেটা আমি কখনো সহ্য করবো না।”
জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৩১ জন প্রার্থী পরিবর্তনের প্রসঙ্গ ধরে দেশ টেলিভিশনের সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে জানতে চেয়েছিলেন, পরিবর্তনের এই ধারাবাহিকতা আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও থাকবে কিনা।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ই বিবেচনায় রাখা হয়েছিল।
“যে কোনো নির্বাচনে নমিনেশনে পরিবর্তন এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। ক্ষেত্রমত যেখানে আমরা অবশ্যই যাচাই করে দেখব। কার যেটা সম্ভাবনা আছে, কার নেই অথবা আমাদের বেশকিছু নিবেদিতপ্রাণ কর্মী আছে হয়ত বেশিদিন আর বাঁচবে না, বয়ো-বৃদ্ধ হয়ে গেছে। তাদেরকে আর কষ্ট দিতে চাইনি নমিনেশন দিতে।
“এটা এমন একটি ব্যাপার, ইলেকশন সামনে রেখে আপনি কোনটা কতটুকু করবেন, কে ভোট পাবে বা না পাবে, জিতবে কিনা, সবকিছু বিবেচনা করেই নির্বাচনে দেওয়া হয়।”