স্টাফ রিপোর্টার ॥ খুলনায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা বিষয়ক বিভাগীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এইড ফাউন্ডেশন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, সিয়াম ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সম্মিলিত উদ্যোগে এবং দি ইউনিয়ন এর আর্থিক সহযোগিতায় কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব লস্কার তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
এসময় মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক তার বক্তব্যে বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে এদেশের জনগণকে রক্ষার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের সকল মন্ত্রণালয়/ বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা, মিডিয়া, সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সমন্বিত কার্যকর অংশগ্রহণ প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধানসমূহ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করার স্বার্থে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের একটি সুপরিকল্পিত কর্ম পরিকল্পনা বা নির্দেশিকা থাকা আবশ্যক। এ লক্ষ্যেই স্থানীয় সরকার বিভাগ “তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ণ নির্দেশিকা” প্রণয়ন করেছে এবং এর আলোকে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ নির্দেশিকা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি হতে রক্ষা করবে। এই নির্দেশিকাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্তাবধানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আওতাভূক্ত সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় ও ব্যবহারের মাত্রা হ্রাস করে জনসাধারণকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে “তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ণ নির্দেশিকা” খুলনা বিভাগে বাস্তবায়নে, কর্মশালায় আগত সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দাতা সংস্থা ‘দ্য ইউনিয়ন’ এর আইন বিশ্লেষক ও কারিগরি পরামর্শক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন।
এসময় তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় দেশে ৩০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় এবং ১ লক্ষ হাজার মানুষ মারা যায়। তামাক বিক্রেতাদের তামাক বিক্রয় বাড়ানোর জন্য প্রচার ও বিজ্ঞাপনে আইন লঙ্ঘন করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে। বিক্রেতারা শিশুদের কাছে তামাকজাত দ্রব্যও বিক্রি করে যা আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের পরিপন্থী। সম্প্রতি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে এবং প্র্জ্ঞাপণের মাধ্যমে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন এ নির্দেশিকার মূল লক্ষ্য। তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী/কোম্পানি ও বিক্রেতাকে লাইসেন্সের আওতায় এনে, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে আনা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পালনে তামাক কোম্পানী ও বিক্রেতাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এসময় কর্মশালায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের মেয়র ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের জেলার সক্রিয় সংগঠনের সদস্যরা বলেন, স্থানীয় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ গাইডলাইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ কাজ করছে। খুলনার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্সিং, তামাক বিরোধী সচেতনতা, আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট, বিজ্ঞাপন অপসারণের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে খুলনা বিভাগের জেলা সদরের ১০টি পৌর মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট বাটার সক্রিয় সদস্য সংগঠন এনজিও সমূহ।
খুলনার নির্বাহী পরিচালক সিয়াম অ্যাডভোকেট মাসুম বিল্লাহর সঞ্চালনায় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুপ্তা সুলতানা।