স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘অযত্নে, অবহেলা ও উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ২৮ বছর পরও বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের নিজের হাতে গড়া ‘লাল বাউল সম্প্রদায়-ললিত কলা একাডেমি’র অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুলতান প্রেমি মানুষেরাই সুলতানের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আসছে। সুলতান প্রেমি মানুষের সার্বিক সহযোগিতায়ই চলে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।’
শুক্রবার (০৯ সেপ্টেম্বর) শোকবহ ১৫ আগস্ট উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির বেহাল দর্শা দুর হবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এমনটি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন খান নিলু।
সুলতানের হাতে গড়া লাল বাউল সম্প্রদায় ক্যাম্পাস, ভাংগাচুরা, ছাঁদবিহীন ঘর। খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ছবি আঁকে, গান-বাজনা শেখে কমলমতি হতদরিদ্র পরিবারের শিশুরা। দেখলেই বুঝা যায় কত দ্বৈনতায় দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি ও তার ক্যাম্পাস। সুলতানের বাগান বাড়ির বাউন্ডারি ভেঙ্গে পড়ারও উপক্রম হয়েছে।
এ সময় নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রবিউল ইসলাম বললেন সকলের প্রচেষ্টায় সুলতানের চেতনায় ঘুরে দাঁড়াবে লাল বাউল।
পুরস্কার বিতরণ শেষে শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। উল্লেখ্য বিশ্ববরেণ্য এই শিল্পী ‘কমলমতি শিশুদের হাতে রং তুলির সাথে ললিতকলা শিক্ষার জন্য ১৯৯৩ সালে মাছিমদিয়ায় নিজ খরিদকৃত জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন এই প্রতিষ্ঠানটি।’
এদিকে এলাকার সূত্র মতে, এক সময় সুলতানের এই বাগান বাড়ির জায়গা দখলেরও পায়তার চলেছিলো। সেব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আজও জরাজির্ণ অবস্থায় শিশুদের নিয়ে ছবি আঁকা ও ললিতকলা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ অবৈতনিকভাবে সুলতান প্রেমি মানুষেরা।
এস এম সুলতানের প্রথম ভাবনা কমলমতি শিশুদের হাতে রং তুলি তুলে দিয়ে প্রকৃতির মতো শিশুর মন-মানসিকতা গড়তে প্রতিষ্ঠা করেন শিশুস্বর্গ। এভাবনাকে সামনে রেখে কমলমতি শিশুদের নিয়ে নৌকায় চড়ে নদী পথে ঘুরে ঘুরে ছবি আঁকার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তৈরি করেন ভ্রমন উপযোগি একটি নৌকা। যা আজ সুলতান সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারত উপমহাদেশে আমরা যেটাকে বলি কৃষি সভ্যতা অর্থাৎ এগ্রিকালকালচার সিভিলাইজেশন, একমাত্র এস এম সুলতান কৃষি সভ্যতা নিয়ে সারা জীবন ছবি এঁকেছেন। বিশেষ করে তাঁর জীবনের ২০/২৫ বছর।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু, পৌর কাউন্সিলর তুফান, সমাজকর্মী কাজী হাফিজুর রহমান, প্রভাষক মাহাবুর রহমান লিটু, লালা বাউলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার ফকির, সালাউদ্দিন শতিল, সুলতান সংগ্রশালার কিউরেটর তন্দ্র মূখার্জীসহ শিক্ষক, অভিভাবক ও কমলমতি শিশুরা।