স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনলাইনে নড়াইলে শিশুশ্রম নিরসন সংক্রান্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় ভার্চুয়াল এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে এ সেমিনারে শিশুশ্রম বিষয়ের ওপর মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসি অফিসের সহকারি কমিশনার (আইসিটি) আব্দুল্লাহ বিন শাফিক।
উত্থাপিত মুলপ্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সা:) মো. ইয়ারুল ইসলাম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউর রহমান, জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনিসুর রহমান, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীর টুকু, স্বাবলম্বী’র নির্বাহী পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর রিন্টু, সৈয়দ খায়রুল আলম প্রমুখ।
সেমিনারে শিশুশ্রম বন্ধে বাংলাদেশের আইনের প্রধান প্রধান দিক তুলে ধরা হয়। আইনে বলা হয়েছে যেমন:- আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ, আমাদের সংবিধান, শিশু আইন- ১৯৭৪, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনে শিশুদের প্রতি সকল প্রকার নিষ্ঠুরতা, জোর জবরদস্তি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার এবং যেকোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেখানে দুঘর্টনার আশঙ্কা রয়েছে এবং যার ফলে তার শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এমন ধরনের কাজ থেকে শিশুর নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে। যেসব কাজ শিশুর স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর এবং যে কাজ তার শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, নৈতিক বা সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সে সকল কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারও শিশুর রয়েছে। আমাদের শ্রম আইনেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী বা কিশোর যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। তবে কোনো শিশু (চৌদ্দ বছর পূর্ণ হয় নাই এমন কোনো ব্যক্তি) যদি কোন ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। তারাও কর্মরত শিশুদের মধ্যে পড়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে বয়স অনুযায়ী শিশু অধিকার: ৭ বছরের নিচে শিশুর কোনো আইনগত দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা নেই, ৬-১০ বছরের নিচে শিশুর বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, ১২ বছরের নিচে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। ১৪ বছরের নিচে কারখানায় কাজ নিষিদ্ধ। ১৫ বছরের নিচে পরিবহন খাতে কাজ নিষিদ্ধ। ১৬ বছরের নিচে শিশু অপরাধীকে কারাগারে রাখা বেআইনি।
প্রসঙ্গত, শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে নয়টি কৌশলগত ক্ষেত্র চিহ্নিত করে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। এখানে ৯টি কৌশলগত ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলে:
– শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে নীতি বাস্তবায়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের বিষয়টি দেখবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ন্যাশনাল কমিশন টু রিভিউ দ্য ওয়ার্কিং অফ দ্য কনস্টিটিউশন।
– শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি দেখবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
– স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়নে কাজ করবে।
– শিশুশ্রম রোধে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন।
– কর্মসংস্থান ও শ্রম বাজারে শিশুশ্রম বন্ধের বিষয়টি দেখবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
– আইন ও প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
– শিশুশ্রম প্রতিরোধে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজ করবে।
– শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের সুরক্ষার দায়িত্ব থাকবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনগুলোর ওপর।
– শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং সরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলো গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কাজ করবে।
এছাড়া,‘শ্রমজীবী শিশুর সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ, আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের নিয়োগ বন্ধ করা, শিশু শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, তার কর্মপরিবেশ, শিশু শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ও মজুরি নির্ধারণের বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে।’