• 14 Nov, 2025

নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাসুদ হত্যা: মানবাধিকার লঙ্ঘনের জোরালো অভিযোগ, প্রধান আসামি গ্রেফতার

নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাসুদ হত্যা: মানবাধিকার লঙ্ঘনের জোরালো অভিযোগ, প্রধান আসামি গ্রেফতার

নড়াইলকণ্ঠ : নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা–হাচলা ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মাসুদ রানা শেখ (৫০) হত্যাকাণ্ড শুধু একটি ব্যক্তিগত শত্রুতার ঘটনা নয়—এটি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং নিরাপত্তাহীনতার চিত্র স্পষ্ট করে তুলেছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) গভীর রাতে খুলনা থেকে মামলার প্রধান আসামি রহমান খাঁ (৫২)-কে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। তিনি উপজেলার শুক্তগ্রাম এলাকার ছানোয়ার খাঁর ছেলে।

কালিয়া থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও প্রযুক্তির সহায়তায় রাতের গোপন অভিযানে রহমান খাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে এ মামলার ৩ নম্বর আসামি আসাদুজ্জামান নান্নু খাঁ (৫৬)-কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পূর্বশত্রুতা, মাদকবিরোধী অবস্থান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ:

নিহত মাসুদের ছোট ভাই ওমর সানী শেখ জানান, ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দত্তমোড় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে শুক্তগ্রামের মান্দার খাঁর বাড়ির পাশে কবরস্থানের সামনে প্রতিপক্ষের লোকজন তার ভাইকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। পরদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ, এলাকার মাদক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং পূর্বশত্রুতার জেরেই মাসুদের ওপর হামলা চালানো হয়। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপসহ বুক, হাত ও পায়ে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল—যা একটি সংগঠিত হত্যা পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।

গ্রামাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মানবাধিকার উদ্বেগ:

এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনা নয়, বরং গ্রামাঞ্চলীয় এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার দুর্বলতা ও মানবাধিকার সংকটের ইঙ্গিত বহন করে।

এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত, মাদক বেচাকেনা, দলে দলে বিভক্ত রাজনীতি এবং প্রভাবশালীদের আধিপত্য সাধারণ মানুষের জীবনকে অনিরাপদ করে তুলেছে।

রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়মিত হলেও অনেক সময়ই ভুক্তভোগীরা ন্যায্য বিচার পান না।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, মাসুদ হত্যাকাণ্ড একটি স্পষ্ট উদাহরণ—যেখানে একজন রাজনৈতিক কর্মী বারবার হুমকি পাওয়ার পরও যথাযথ নিরাপত্তা পাননি।

নিহতের ভাই মাসুম শেখ বাদী হয়ে প্রধান আসামি রহমান খাঁসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও পাঁচজনকে আসামি করে কালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পরিবারের দাবি, এলাকাজুড়ে ভয়–ভীতি ছড়ানোর জন্যই এ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তারা দ্রুত বিচার ও সব আসামির গ্রেফতার দাবি করেছেন।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে শক্তিশালী নজরদারি, প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের নিরাপত্তা এবং বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি। অন্যথায় এমন নৃশংস হামলার পুনরাবৃত্তি বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাসুদ রানা হত্যা শুধু একটি গ্রামের ব্যক্তিগত বিরোধ নয়; এটি দেশের গ্রামীণ মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি কঠোর প্রতিচ্ছবি। প্রধান আসামির গ্রেফতার বিচারপ্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলেও এখনও অধিকাংশ আসামি পলাতক থাকায় নিহতের পরিবারসহ সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কাটেনি। দ্রুত তদন্ত, স্বচ্ছ বিচার এবং ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।