ডেস্ক রিপোর্ট: বন্ধ ঘোষিত পাবনা চিনিকল অবিলম্বে চালু করা না হলে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আখ ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন আখচাষীরা। পাবনা সুগার মিল বন্ধের প্রতিবাদে এবং চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম চালুর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে এ হুশিয়ারি দেয়া হয়।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের দাশুড়িয়াস্থ চিনিকলের প্রধান ফটকে টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন আখচাষী ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে সমাবেশ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী ওরফে পেঁপে বাদশা।
বক্তব্য দেন, ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মকলেছুর রহমান মিন্টু, দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বকুল, সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিদ বাবলু মালথা, আখচাষী নজরুল ইসলাম, কৃষক নেতা মুরাদ মালিথা, পাবনা চিনিকল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন পাবনা চিনিকল আখচাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী ডিলু।
আখচাষীরা বলেন, হঠাৎ করে পাবনা সুগার মিলসহ ৬টি মিল বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় মিলের স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক ১২শ’ শ্রমিক-কর্মচারীসহ সাড়ে ৩ হাজারের বেশি আখচাষী মহাবিপাকে পড়েছেন। ১৮ মাস ধরে পরম যত্নে ফলানো ১৮ হাজার বিঘা জমির প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাঠে পড়ে আছে
শাহজাহান আলী ওরফে পেঁপে বাদশা বলেন, বিমান, রেলওয়ে, তাঁতশিল্প লোকসানে আছে। সেগুলো তো বন্ধ হচ্ছে না। ওই সব সেক্টরের তুলনায় চিনিকলে লোকসান সামান্য। তারপরও মোট চিনিকলের স্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সে টাকার বার্ষিক ৪ শতাংশ মুনাফা ধরলেও বছরে বাড়ছে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা। সে হিসেবে চিনিকলকে অলাভজনক বলাই যাবে না। অথচ পাবনাসহ দেশের ৬টি মিল বন্ধ করে দেয়া হল। চিনিকল বন্ধ করতে হলে অন্তত দেড় বছর আগে ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। কেননা ১৮ মাসের ফসল হল আখ। মাঠে এখনও আখ দণ্ডায়মান। অনেক চাষী বংশপরম্পরায় আখ চাষ করে আসছেন।
শ্রমিক নেতা আশরাফুল ইসলাম উজ্জল বলেন, দেশে চিনিকল চালু আছে তাই আজও চিনির বাজার সহনশীল। চিনিকল বন্ধের ফলে চিনির দাম বেড়ে যাবে। কোনো মহলের বাজার তৈরি করে দেয়ার জন্যই হয়তো এটা করা হয়েছে।
আখচাষীরা বলেন, পাবনা চিনিকল এলাকায় প্রায় ১৯ হাজার বিঘা জমিতে সাড়ে ৩ হাজার কৃষক আখ চাষ করেছেন। এর দাম প্রায় ২৫ কোটি টাকা। যদিও বলা হচ্ছে, এই আখ নাটোর চিনিকলে নেয়া হবে। কিন্তু তাতে সময় এবং ভোগান্তির শেষ হবে না। কেননা ওই মিলের ধারণ ক্ষমতা এবং মিল থেকে মাঠের দূরত্ব একটা ফ্যাক্টর। যেমন পাবনার ঢালারচর থেকে নাটোর চিনিকলের দূরত্ব কমপক্ষে দেড়শ’ কিলোমিটার। সব মিলে চাষীরা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। অবিলম্বে মিল চালু এবং আখ মাড়াই শুরু না করলে আখ ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলা হবে। তারা বলেন, পাবনার আখ দিয়ে পাবনা চিনিকল চলবে, অন্য কোনো মিলে দেয়া হবে না। যতদিন মিলটি চালু না হয়, ততদিন বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।
রংপুরের শ্যামপুরে আজ অর্ধদিবস হরতাল : চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আজ শ্যমপুর বন্দর এলাকায় অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আখচাষউরা। একই দাবিতে মঙ্গলবার শ্যামপুর চিনিকলের সামনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। দাবি না মানলে রেলপথ-রাজপথ বন্ধের হুমকি দিয়েছেন তারা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকার সেখান থেকে সরে না আসা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। শ্যামপুর এলাকার আখ শ্যামপুর চিনিকলে মাড়াই করার সিদ্ধান্ত দেয়া না হলে জমির আখ কেটে অন্য ফসল আবাদ করা হবে।
শ্যামপুর চিনিকল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বুলু আমিন জানান, বুধবার (আজ) ভোর ছয়টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করা হবে। স্টেশনে কোনো ট্রেন যাতায়াত করতে দেয়া হবে না, দোকানপাটসহ সবকিছুই বন্ধ থাকবে।